কৌতূহল ও চুলকানি - কলমে দেবাশীষ মিত্র

কৌতূহল ও চুলকানি

দেবাশীষ মিত্র

কৌতূহল বিষয়টার আনুমানিক বয়স কত জানা নেই। তবে আমার মনে হয় সভ্যতার আদি থেকেই মানুষের মধ্যে কৌতূহল নামক বিষয়টির হামাগুড়ি দেওয়া। আসলে আমি বলতে চাইছি কৌতূহল ব্যাপারটা অনেকটা ওই চুলকানির মতন, একবার ধরলে আর রেহাই নেই। আর যত চুলকাবেন তত মজা। 


 এই কৌতূহল নিয়ে একটা ঘটনার কথা বলি। আমরা ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকি। আর নিজের হাঁড়ির ঢাকনা চেপে অন্যের হাঁড়ির দিকে ঘাড় উঁচু করা বাঙালির দীর্ঘকালের ঐতিহ্য। একদিন হলো কি আমার ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই দেখলাম এক ভদ্রলোক আমার দরজায় কান পেতে স্ট্যাচু হয়ে আছেন।দেখে মনে হলো উনি যেন শকুন্তলা, রাজার বিরহে আমার দরজায় তার আগমনের সংবাদ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। দরজা খুলতেও তার কোন সার নেই। ছোটবেলায় দিদিদের সাথে স্ট্যাচু-স্ট্যাচু খেলতাম। ভাবলাম উনি হয়ত ওনার বাল্যকালে ফেরত গেছেন। যাইহোক খুব জোরে একবার গলা খাঁকারি দিলাম। চমকে স্ট্যাচু ভাঙলেন, আর তারপর আমাকে দেখে একমুখ মাছি। কোন রাগ দেখাইনি, আহা বেচারি কৌতুহলের চুলকানিতে আক্রান্ত হয়েছে। মনে মনে  ঈশ্বরের কাছে ওনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করলাম।

ঈশ্বরকে বললাম, "ওনার ভেতরে থাকা অতি কৌতূহল জনিত চুলকানির নিবৃত্তি  ঘটিয়ে ওনাকে উত্তরণের পথে সামিল করুন।"


আমিও কি কৌতুহলের চুলকানি থেকে নিবৃত্তি পাই? কখনই না, রাস্তায় বের হলে অজানা গলিঘুঁজি দেখলে কৌতূহল নামক চুলকানিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুটকুট করতে থাকে। তারপর একসময় মাভৈ বলে ঢুকে পড়ি সেই গলির গোলকধাঁধায়। এই ভাবে অজানা কলকাতাকে কতবার চিনেছি তার কোন জমা খরচের হিসেব লেখা হয়নি।


উৎসব , অনুষ্ঠান বা বিয়েবাড়িতে শোনা যায় কত ফিসফাস, " তুমি আর এখানে দাঁড়িয়ে ধেষ্টামো করো না, বোস গিন্নিকে দেখ , গলার নেকলেসটা দেখেছ? কোথা থেকে পাচ্ছে বলো তো!"

খুসখুসে গলায় চ্যাটার্জি বাবু বলেন, " সবই ওই বাঁ হাতের কৃপায়, না হলে ....."

" না হলে কি শুনি, যাও না একটু খেঁজুড়ে আলাপই করো না । তা হলে কিছু আন্দাজ পাওয়া যায় না কি! তোমার মতন লোকের দ্বারা ....। অগত্যা এই কলিতে গিন্নির গুঁতোয় কর্তার কর্ম। অতএব কৌতুহলের নামাবলি জড়িয়ে চ্যাটার্জি বাবু বাধ্য বুলডগের ন্যায় অতি নিষ্ঠার সাথে চুলকানির কাজে নিজের সন্ধ্যাটা সমর্পন করলেন। একসময় ডিনার শেষ হলো, চুলকানির মহাপর্বের সমাপ্ত হলো না। কোন এক ছুটির দিনে নিজের বাড়িতে বোস দম্পতিকে নিমন্ত্রণ করা হলো ওই চুলকানি পর্বের নাটকীয় অবসানের জন্য। 


তবে আমার এই স্বল্প জ্ঞানে মনে হয় কৌতূহল  জনিত চুলকানির লক্ষণ খুব গভীরভাবে কারুর মধ্যে দেখা দিলে তা এলোপ্যাথি , হোমিওপ্যাথি, কোবরেজি বা ভ্যাকসিন কোন কিছুই বিশেষ কাজ করে না। তাই বলি "হে ঈশ্বর , করোনার থেকেও হাজার গুণ শক্তিশালী কৌতুহলের চুলকানিকে সঠিক পথের দিশা প্রদান করুন এবং মানব সমাজের উত্তরণ ঘটান।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

close