দন্ত বৃত্তান্ত - কলমে দেবাশীষ মিত্র

দন্ত বৃত্তান্ত

দেবাশীষ মিত্র

দন্ত বা দাঁতের মহিমা যে অসীম সেকথা ত্রিভুবনে কে না জানে বলুন তো? বিকশিত দন্তের ওঠানামায় কত দেব-দানব আর মহামানব যে যুগযুগ ধরে যে ঘায়েল হয়েছে তা আর বলার নয়। এই দেখুন দেখুন না, বিকশিত দন্ত যখন আপন সৌন্দর্যে তখন বিশ্বযুদ্ধ থেকে গৃহযুদ্ধ শান্তির সাদা পায়রা ওড়ায়। তবে এটাও ঠিক দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না দিলে তার ফল অতি বিষময়। এই শর্মারই তো ঘটেছিল সেই ঘটনাটা। একবার দাঁতের যন্ত্রণায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। খুঁজে পেতে  গেলাম এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে। উনি আমাকে দেখেই গলা টিপে একটা ইজি চেয়ারে শুইয়ে দিলেন। তারপর মাড়িতে প্যাক করে একটা ইনজেকশন। একটু বসতে বললেন। দশমিনিট পর শুরু করলেন আমার দাঁতের সঙ্গে ওনার হাতপাঞ্জা। উনি সাঁড়াশি দিয়ে আমার দাঁত ধরে টানছেন একেবারে দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খানের মুডে, আর আমি আ আ করছি । এদিকে আমার পা উঠে গেছে ওনার থুতনিতে। উনি আমার দাঁত ধরে টানছেন , আর অপরদিকে আমি ওনার থুতনিতে পা দিয়ে ঠেলছি। "আহা করেন কি, করেন কি মশাই। এভাবে কখনো দাঁত তোলা যায়! আপনি মহা অধৈর্য লোক তো !" দাঁত খিচিয়ে বললেন ডাক্তার বাবু। কষ্টের মাঝেও বুঝলাম ডাক্তারবাবু ঠিকই বলেছেন। ওই দাঁতটা কতকাল ধরে আমার মাড়ির মধ্যে সিংহাসন বিছিয়ে বসেছে, ওকে কি অত সহজে সিংহাসন থেকে সরানো যায়! যাই হোক আরো কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে ওটাকে রাজ্যহারা করলেন ডাক্তারবাবু। 

তবে এই দাঁত তোলার বিষয়ে একটা গোপন তথ্য আমি যোগাড় করেছি। জনগণের উপকারের জন্য এটা প্রদান করছি। আমি এই তথ্যটা পেয়েছি এক রেডিও জকির অনুষ্ঠান থেকে। আপনারা কোন ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেই ডাক্তার বাবুকে বলবেন, " দাঁতের ডাক্তার কথাটা দশবার বলুন তো। যেমন ওই কবাডি কবাডি বলা হয়।" উনি বলতে পারলে বুঝবেন উনি ঠিকঠাক দাঁতের ডাক্তার। পরীক্ষায় উত্তর মিলবে।

যাইহোক দাঁত জিনিসটা খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। এই উপাদানটির সাহায্যে মানুষ খাদ্য খাবার যেমন পেটের মধ্যে চিবিয়ে চালান করে ঠিক তেমন করেই পিটবুল প্রজাতির মতো   কিড়মিড় করে অনেক কার্যও সমাধা করে থাকে।

দাঁত নিয়ে দুজন মানুষ একে অপরের প্রতি কতখানি সহানুভূতিশীল তা একবার দেখেছিলাম। এক অনুষ্ঠান বাড়িতে দুজন মানুষের মধ্যে ডিম আগে না মুরগি আগে এই রকম কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একচোট খুব জোর লেগে গিয়েছিল। কেউ কাউকে ছাড়বে না। কথার বোমা বর্ষণ চলছে পুরোদমে। হঠাৎ একপক্ষের একপাটি বাঁধানো ছিটকে পড়লো , আর পড়েই আলমারির তলায়। মহামুস্কিল অপরপক্ষের এই অকাল বিরতিতে। অগত্যা সেইপক্ষ আলমারির তলা থেকে দাঁতের পাটি অপরপক্ষের মাড়িতে বসিয়ে আবার শুরু করে দিল দ্বিতীয় অর্ধের খেলা।

এমন অসংখ্য ঘটনা দাঁতকে ঘিরে আমাদের বিশ্বসংসার জুড়ে রয়েছে। দাঁতের জন্য আমাদের আক্কেল হয়।দাঁতকে ভালো রাখুন না হলে দাঁতহীন ফোকলা ট আর ঠ এর বোঝা বইতে হবে বাকি জীবনে আর দাঁতকে ব্যবহার করুন সকলের আনন্দের ও খুশির জন্য। আজ আমার সীমিত সামর্থে সেই চেষ্টাটাই করলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

close