বাঙালির কালীপুজো ও বাজি
দেবাশীষ মিত্র
কালীপুজো ও বাজি বাংলার জনজীবনে সমার্থক হয়ে গেছে। এখন করোনা রাক্ষসের দাপটে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ। এখন শুধু ফেলে আসা বছরগুলোর স্মৃতির রোমন্থন করা ছাড়া আর উপায় কি?
মনে আছে আমাদের ছোটবেলায় দুর্গা পুজো আর লক্ষ্মী পুজো চলে যাওয়ার পরেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই বাজি। সে সময় চকলেট বোম আর দোদোমার জ্বালায় কান পাতা দায় ছিল। এখন তো বোঝাই যায় না কালীপুজো বলে। শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়ে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। কারণ, অনেক বয়স্ক মানুষ, হার্টের পেশেন্ট এর জন্য খুব কষ্ট পেতেন।তবে খারাপ লাগে আকাশের অনেক বাজি হারিয়ে যাওয়ায়। রকেট, সাইরেন, উড়ন্ত তুবড়ি ইত্যাদি অতীতের মিউজিয়ামে জায়গা করে নিয়েছে।
আমার একমাত্র মামা বাজি তৈরিতে স্পেশালিস্ট ছিলেন। উনি নিজের হাতে তুবড়ি,উড়ন্ত তুবড়ি, রংমশাল,ছুঁচো বাজি তৈরি করতেন এবং করতেন শুধু নয় এক কথায় অসাধারণ করতেন। আমরা ছোটরা অপেক্ষায় থাকতাম মামা কালীপুজোয় বাজি নিয়ে কি সারপ্রাইজ দেন তা দেখার জন্য। মামা তুবড়ি নিয়ে কম্পিটিশনেও যেতেন ও পুরস্কার জিতে আসতেন। তবে এই বাজি তৈরি করতে গিয়ে ওনাকেও ছোটখাটো এক্সিডেন্টের সামনে পড়তে হয়েছিল। এই শর্মারও যে তেমন হয়নি তা নয়। একবার খুব জোর বেঁচে গিয়েছিলাম সাইরেন বাজি অন্ধকারে উল্টো করে বসিয়ে আগুন দেওয়ায়। আমার নাকের পাশ দিয়ে সেই আগুনে চাকতি হুস করে সামনের দেয়ালে গিয়ে আঘাত করে। ওটা আমার মুখে লাগলে নির্ঘাত মুখ ফুটো হয়ে যেত। আর ছিল একটি ভয়ঙ্কর বাজি, সেটা হলো ছুঁচো বাজি। ওটা কখন কি ঘটিয়ে ফেলবে তা জানা নেই। একটু অসাবধানে ওটা গিয়ে মানুষের জামাকাপড়ে ঢুকে যেত। উড়ন্ত তুবড়িতেওঁ অনেক বিপদ আসতো, যদি সঠিক সময় হাত থেকে ছাড়া না হতো। তবু সব মিলিয়ে সেই দিনগুলো উৎসবের আলোয় খুব প্রাণবন্ত ছিল। সকল দীনতা হারিয়ে যেত আলোর উৎসবে। আজ উৎসব আছে, কিন্তু কিসের একটা অভাব যেন রয়ে যায়। হয়তো করোনা একদিন বিদায় নেবে আর তার সাথে ফিরে আসবে আমাদের চেনা আলোর দিনগুলো। আমি কিন্তু খুব আশাবাদী। আসুন না আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে ফিরিয়ে আনি সেই আলোয় মোড়া উৎসবের দিনগুলি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks for your comments.