ভুত হওয়া কি মুখের কথা
রাজু দাস
সদ্য বিধানসভা ভোট শেষ হল,জয়ী প্রার্থীরা আনন্দে দিশেহারা,যার ফলে অকাল দশেরাও পালন শুরু করে দিলেন কেউ কেউ।অনেক আবার মন্ত্রীত্ব পেয়ে 'পূজা-আরতি-ভোগ' সবেতেই আছেন, পারলে রাজসূয় যজ্ঞ শুরু করে দেন।এযেন দিগ্বিজয়ের আনন্দে দিশেহারা অবস্থা।
আমার ঘটনার সূত্র প্রাপ্তি এমনই এক জয় পরাজয়ের কান্ডারীর থেকে।ভদ্রলোক আমাদের ঘনিষ্ঠ।আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া আছে।বাম আমলের পুরানো কর্মী এখন দলবদলু,নাম রথীন জোয়ারদার।গত কাল সন্ধ্যায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে আমাদের বাড়ি হাজির হলেন।দু-এক কথার পর বললেন বুঝলে কাল রাতে আমি এক আজব স্বপ্ন দেখলাম, আমি বললাম কেমন?উনি শুরু করলেন, আর বোল না আমি স্বপ্ন দেখলাম আমি গত হয়ছি।আমি বলি বলেযান থামার দরকার নেই।উনি বলেন শেষকৃত্যের শেষে ওনার স্থান হয় ভুতের রাজ্যে।স্থান মানে নিম্নমানের স্থান।সেখান থেকেই শুরু হল একজন এলিট শ্রেণীর ভুত হয়ে ওঠার লড়াই।রথীন বাবু লক্ষ্য করলেন ঐ ভুত সমাজে দুটি শ্রেণী,সাদা এবং কালো।এখন মূল লড়াই হল উভয় দলের হত্তা-কত্তা-বিধাতাদের ধরে নিজেকে ক্রমান্বয়ে এলিট সম্প্রদায়ভুক্ত করা,যেমন পাড়ার দাদা-দিদিরা করে থাকে।
এখন কথা হচ্ছে যতক্ষণ না তুমি এলিট সম্প্রদায়ভুক্ত ভুতে উন্নীত হচ্ছ ততক্ষণ কোনো মানুষকে ভয় দেখাতে পারবেনা।এরজন্য চাই বিশেষ ছাড়পত্র।আর তার জন্যে তোমাকে হয় সাদা নাহলে কালো যেকোনো এক দলে জয়েন করতে হবে।যেকোনো এক দলে যোগ দিলে অন্য দলের ভুত দাদারা তোমার স্বীকৃতি আদায়ে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।অবশ্য মানুষকে ভয় দেখানতো মুখের কথা না।সবাই যদি ঘাটে যাওয়ার পর মানুষকে ভয় দেখাতে পারত ,তবে পৃথিবীর সব মানুষপিছু আট-দশটা ভুত লেগে থাকত।তখন সব মানুষ ভুতের ভয়েই মারা যেত,অন্য রোগের দরকার হত না।যাই হোক এলিট সম্প্রদায়ভক্ত ভুত হতে কিছু ধাপ পার হতে হত।এই যেমন জ্যান্ত মানুষকে নিজের অস্তিত্ব বোঝানো,একটা পর্দা ওড়ানো, কানের কাছে একটা ফিস শব্দ করা, চেয়ার-টেবিল সরানো, দড়াম করে দরজা বন্ধ করা,টুক করে ঘরের লাইট-ফ্যান-টিভি বন্ধ করে দেওয়া,সবশেষে নিজের অবয়ব দেখানো।এই এতগুলো ধাপ পার হবার পর সত্যিকারের এলিট সম্প্রদায়ের ভুতে উন্নীত হওয়া যায়।এই অব্দি বলে তিনি থামলেন ।
রথীন বাবু বললেন - "আজ তাহলে উঠি"।
আমি বললাম - "আচ্ছা" । উনি চলে যাওয়ার পর আমি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম ।
সকালে বারান্দায় একটা জটলার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে পাড়ার লোকেদের কাছে শুনি রথীন বাবু কাল সন্ধ্যায় মারা গেছেন।শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম!! মনে হল আমার শিরদাঁড়া দিয়ে যেন একটা ভারি শীতল স্রোত বয়ে গেল।
আপনি যদি আপনার লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে চান , তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ "সাহিত্য মেলা "তে Join করুন ।
"সাহিত্য মেলা " - https://www.facebook.com/groups/sahityomela
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks for your comments.