পুলুকাকুর ভালোবাসা - দেবাশীষ মিত্র



 পুলুকাকুর ভালোবাসা

দেবাশীষ মিত্র

আমি যে ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি সেটা বিশ্বাস করা না করা সম্পূর্ণ পাঠক-পাঠিকাদের বিষয়। তবে এটা হলফ করে বলতে পারি বানিয়ে  বানিয়ে ভূতের গল্প বলার দক্ষতা আমার অন্তত একদমই নেই। সে যাই হোক যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা এবার বলা যাক। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। পড়াশুনার পাশাপাশি ফুটবল আর সুইমিং, এই দুটি স্পোর্টস অন্ত ছিলাম প্রাণ। বেশ চলছিল। আমাদের পাড়াতে এই বিষয়ে পুলু কাকু বলে একজন ছিলেন, যিনি আমাদের সকলকে এই বিষয়ে খুব গাইড করতেন। আমাকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে একবার টু হান্ড্রেড মিটার ফ্রী স্টাইলে আমার পারফরম্যান্স দেখে বলেই ফেলেছিলেন আমাকে উনি স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্যই নামাবেন। সে যাই হোক ছোটখাট প্রতিযোগিতার খবর উনিই নিয়ে আসতেন। আমি সেখানে অংশগ্রহণও করতাম এবং মেডেলও জিততাম। দিনগুলো বেশ কাটছিলো। কিন্তু তারপরই এলো সেই সাংঘাতিক দিনটা। এই প্রসঙ্গে বলি পুলুকাকু খুব ভালো গাড়ি চালাতেন। মাঝে মাঝেই লং ড্রাইভে হারিয়ে যেতেন। হাঁ তারপর যে কথা বলছিলাম , হঠাৎই বিনামেঘে বজ্রপাতের মতন ভয়ংকর খবরটা এলো। পুলুকাকু আর নেই, বোম্বে রোডে একটা চলন্ত লরি পুলুকাকুর সাদা মারুতিটাকে গুড়িয়ে দিয়েছে। গাড়িতে ওনার সাথে ওনার মাও ছিলেন। এই ঘটনার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সামলাতে আমার বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। তারপর খানিকটা স্থিতাবস্থা আসার পর আবার সুইমিং-এ ফিরেছিলাম। কিন্তু ফিরলে কি হবে , অতিরিক্ত জলে থাকার ফলে পড়লাম নিমোনিয়াতে। একবারে যমে মানুষে টানাটানি। ডাক্তার প্রায় জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন।  আমিও আমার শেষের দিনগুলো গুনছিলাম।বাড়ির সকলের মুখের মাঝে তখন আমাকে ঘিরে আশঙ্কার কালো মেঘ। 
যাইহোক তখন আমি খুব অসুস্থ এবং এক রাতে আমার বিছানায় শয্যাসায়ী। বাবা মা সারাদিনের ক্লান্তিতে পাশের ঘরে গিয়ে দুচোখের পাতা এক করেছেন। তখন রাত প্রায় দুটো হবে, হঠাৎ দেখি আমার বিছানার ডানদিকে এক ছায়ামূর্তি। আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে, এবার ছায়ামূর্তি থেকে ধবধবে একটা কঙ্কাল। এবার ওই কঙ্কালটার গায়ে মাংস আর চামড়া গজাতে শুরু করলো। এবার যেন চেনা যাচ্ছে, আরে এ তো সেই পুলুকাকু। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
"কিরে এভাবে শুয়ে থাকলে চলবে?" পুলুকাকু বললো।
"আমি যে অসুস্থ, " ভয়ে কাঠ হয়ে আসা শুখনো গলায় কোন রকমে কথাগুলো বাতাসে ভাসিয়ে দিলাম।
"ধুস তোর কিচ্ছু হয়নি, এবার আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।" কথাগুলো বলতে বলতে পুলুকাকু আমার বিছানার কাছে এসে আমার কপালে হাত রাখলেন। ওঃ কি ঠান্ডা, তারপর আর কিছু মনে নেই।
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি আমার হাতের পালস দেখছেন আমাদের হাউস ফিজিশিয়ান ডক্টর মুখার্জি। এক মুখ হাসি নিয়ে বললেন, "এমেজিং, ইটস আ মিরাকল, তুমি একদম সুস্থ।"
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম।
মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, "এখন কোন কথা নয়। আর ডাক্তারবাবু মিরাকল হয়েছে আপনার চিকিৎসাতেই।" দেখলাম ডাক্তার বাবু মুচকে মুচকে হাসছেন। তবে আমি কিন্তু জানতাম আসল কারণটা। কাউকে কোনদিন বলিনি। আশা করি, আমার সুস্থ হয়ে ওঠার আসল কারণটা এখন আর আপনাদের কাছে অজানা নয়।




এই লেখাটি ১৯ শে জুলাই ২০২১ এ সাহিত্য মেলা গ্রুপের #সত্যি_ভুতের_গল্প ইভেন্ট  এর লেখা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । 

আপনি যদি আপনার লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে চান , তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ  "সাহিত্য মেলা "তে  Join করুন । 

"সাহিত্য মেলা " - https://www.facebook.com/groups/sahityomela




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

close