রথের মেলার স্মৃতিকথা - দেবাশিষ মিত্র



রথের মেলার স্মৃতিকথা

দেবাশিষ মিত্র


সময়ের ধারা তার নিজস্ব গতিতে বয়ে চলেছে, কিন্তু কিছু ঘটনা বা উৎসব তার ধারাবাহিক উপস্থিতির অন্যথা করেনি। আজ রথযাত্রা। বছরের এই দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব  বহন করে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। মানুষের বিশ্বাস এই দিনে রথের রশি ধরতে পারলে তার আর পুনর্জন্মের ধকল সহ্য করতে হয়না। এই বিষয়ে নাকি ইন্দ্রনীলময় পুরাণ-এ আছে জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেও নাকি পুনর্জন্ম হয়না। আবার সুতসংহিতায় রয়েছে, 'রথেতু বামনাংদৃষ্ট পুনর্জন্মন বিদতে।' অর্থাৎ, হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস রথের রশি ছোঁয়ার থেকে বড় পুণ্য আর কিছুতেই হয় না।এছাড়া কপিল সংহিতায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। একটি শ্লোকে বলা হচ্ছে, গুন্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি জগন্নাথ দেবের দর্শন করবে সে ব্যক্তি কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ভুবনে যাবে। এইগুলির সত্য মিথ্যা নিয়ে বিতর্কে যেতে চাইনা, তবে এইগুলি যে দীর্ঘ সময়কাল ধরে মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক, এবার আসি নিজের কথায়। 

Banggood.com

           তখন খুব ছোট। বাবার কিনে দেওয়া রথ নিয়ে মায়ের সাথে পাড়ার রাস্তায় বের হতাম। জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার রথ নানা ফুলের ছোঁয়ায় একটা বিশেষ মাত্রা পেত। দুচোখ ভরে তাকিয়ে থাকতাম আমার রথের দিকে। সেই বয়সে রথ টেনে পুণ্য আহরণের বোধ আমার মধ্যে জাগেনি। রথের রশি টেনে আশপাশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই আত্মপ্রসাদ লাভ করতাম। রথের মধ্যে মা কিছু প্রসাদ আগে থেকেই ঢুকিয়ে দিতেন। পথ চলতি কেউ যদি রথ স্পর্শ করে প্রণাম জানায়, তার হাতে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ তুলে দেওয়ার জন্য। এই বিষয়টায় ছিল আমার মহাআপত্তি। কারণ, ওটা করলে আমার ভাগে যে কম পড়বে। সুতরাং, স্থান, কাল ও পাত্রের মর্যাদা না রেখেই আমি injunction জারি করতাম। কিন্তু মায়ের জ্বালায় তা অল্প সময়ের মধ্যেই vacant হয়ে যেত। তারপর এক সময় বাড়ি ফেরা হত। আর একটি বিশেষ ব্যাপার সেই সময় এলাকায় ঘটতো, সেটা হলো রথের মেলা। আর রথের সেই মেলায়  পাঁপড় ভাজা ও জিলিপির আস্বাদ না নিয়ে ঘরমুখো হতাম না। মাকে দেখেছি ঘরকন্নার জন্য কত জিনিস কিনে আনতে। নাগরদোলায় চললেই পেট গুড়গুড় করতো, আর ঘোড়ারদোলা থেকে নেমেই মনে হতো আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার আশপাশের জনেরা তীব্রবেগে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। খানিকপরে স্থিতাবস্থা আসতো। বাবা খুব রাগ করতেন, কিন্তু কে কার কথা শোনে, পরেরদিন আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতাম। আজ এত বছর পরেও মনে হয় এইতো সেদিনের কথা,চেষ্টা করলেই হাত বাড়িয়ে দিনগুলো ছোঁয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনচর্চার কত বদল হয়েছে, পুরোনোকে সরিয়ে নতুনের আসন তৈরি হয়েছে,কিন্তু হৃদয়ের মাঝে স্মৃতির মনিকোঠায় আজও জেগে আছে রথযাত্রার উৎসবকে ঘিরে অনেক অনেক স্মৃতি।




আপনি যদি আপনার লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে চান , তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ  "সাহিত্য মেলা "তে  Join করুন । 

"সাহিত্য মেলা " - https://www.facebook.com/groups/sahityomela

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

close