লকডাউন ও জগা - আমিতাভ পাল


লকডাউন ও জগা

অমিতাভ পাল
(১)

সন্ধ্যে থেকেই পাশের বাড়িতে তুমুল চেল্লামিল্লি চলছে। কাকিমা জগাকে হেব্বি তুলোধোনা করছে। নির্ঘাৎ জগা আবার কিছু ছড়িয়েছে। 

আমিও এই বোরিং লকডাউনের মার্কেটে জগার ছড়ানোর মজার গল্পের আশায় ওকে ফোন করলাম,

- "হ্যালো জগা, কী ছড়িয়েছিস আবার? কাকিমা এত বকাবকি করছেন কেন?"

- "আর বলিস না ভাই!! মা পুরো খচে ব্যোম। একটু সামলে নিয়ে তোকে কল করছি", কাঁচুমাচু গলায় জগার উত্তর।

আধাঘন্টা বাদে দেখলাম একটু যেন ঝড় শান্ত হলো। আর তখনই জগার ফোন,

- "আরে ভাই, মেয়েদের সত্যি বোঝা দায়। তারা কেন যে রাগে আর কেন যে হাসে কিছুই বোঝা যায় না। তা সে মা হোক বা বান্ধবী।"

- "সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু ঘটনাটা কী? কাকিমা এত ক্ষেপেই বা গেলেন কেন?"

- "তাহলে তোকে খুলেই বলি ঘটনাটা।"

(২)

একমাসের উপর এই লকডাউনের চক্করে লাইফটা খুব বোরিং যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের একটা ঘুরতে যাবার গ্রুপ আছে। সেখানেই একজন প্রস্তাব দিল যে এই বোরিং ব্যাপার কাটাতে অনলাইনে গ্রুপে লুডো খেলা হোক। সেই মতন করে আমি লুডো app ডাউনলোড করে নিলাম। কয়েক দান খেলার পরে ব্যাপারটায় একদম নেশা লেগে গেলো। মানে খেলে যাচ্ছি তো খেলেই যাচ্ছি।

গতকাল বিকেলের ঘটনা। মোবাইলে লুডো খেলায় মশগুল। ঐদিকে জয়া বারকয়েক WhatsApp এ মেসেজ করেছে। আমার তো সেইদিকে খেয়ালই নেই। মনের আনন্দে খেলেই চলেছি। হঠাৎ দেখি মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে জয়া ফোন করেছে।

এখন এই লুডো app টা এমনই, যে কেউ ফোন করলে খেলা বন্ধ হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তুমি যদি দান না চালো, তাহলে randomly যে কোনো গুটি নিজে থেকেই চলা হয়ে যায়। 

আমার তখন ক্রিটিক্যাল অবস্থা। নিজের একটা পাকা গুটি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছি। আর এমন সময় নাকি জয়ার ফোন!!

বাধ্য হয়েই জয়াকে বললাম 

- "busy আছি। পরে ফোন  করছি।" তারপর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দিলাম। 

কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা এরই মধ্যে হয়ে গেছে। 

মানে, আমার পাকা গুটিটা কাটা গেছে। 

শুধু তাই নয়, আরো বড় ক্ষতি আমার জন্য ওয়েট করছিল। 

খেলা শেষ করে জয়াকে ফোন দিলাম। দেখলাম ওই দিক থেকে ফোনটা কেটে দিলো। আর তারপর একটা মেসেজ এলো, 

' U cut my call.. How dare you!! You have insulted me!!! Go to hell!!'

জয়া যে ঠিক কী কী কারণে insulted feel করে, তা লিখতে বসলে দু'-দশটা মহাভারত লেখা হয়ে যাবে।


যাই হোক, জয়া রেগে যাবে, আর আমি তাকে বোঝাবো, এই যেন আমার রোজকার কাজ হয়ে গেছে। 

তবে এইবার ব্যাপারটা যে গুরুতর হয়ে গেছে নিজেই বুঝতে পারছি। ঐভাবে আমার কলটা কাটা সত্যি ঠিক হয় নি। 

তাই পরের দিন বেলা প্রায় বারোটা নাগাদ লকডাউনের মার্কেটে পুলিশের ঘেরাটোপ এড়িয়ে গেলাম জয়াদের বাড়ি। উদ্দেশ্য, সামনাসামনি বসে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া। 

জয়াদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি জয়াদের কাজের মাসি হাতে একটা ঝাড়ু আর বালতি নিয়ে ফিনাইল বা সাবান জল দিয়ে ওদের বাড়ির উঠোনটা ঝাড় দিচ্ছে। 

পাছে সাবান জলে আছাড় না খাই, সেই মতন করে পা সামলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠোনে উঠলাম, আর মাসিকে বললাম,

- "মাসি জয়াকে একটু ডেকে দাও তো!!"

কিছু বোঝার আগেই দেখি জলের মগটা সাঁ করে আমার কানের পাশ দিয়ে উড়ে চলে গেল। তারপর দেখি একটা হাওয়াই চপ্পল উড়ে আসছে। কোনরকমে মাথা নিচু করে সেটার হাত থেকে তো বাঁচলাম, কিন্তু ততক্ষণে একটা ঝাঁটার বাড়ি সপাটে আমার মাথায় এসে পড়েছে। এক বাড়িতেই মাটিতে কুপোকাৎ হয়ে আমি চোখে সরষেফুল দেখা শুরু করলাম। 



(৩)

জগার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

- "কাজের মাসি তোকে ঝাঁটাপেটা করতে যাবে কেন? সত্যি করে বলতো, তুই ঠিক কী ভুলভাল করেছিস কাজের মাসির সাথে?"

- "আরে ভাই আমি কি দুশ্চরিত্র নাকি!! না না, ওইসব কিছু করি নি। মারধোর খেয়ে যখন নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কী ভুল করেছি, তখন দেখি মাসি চিৎকার চেঁচামেচি করে আমাকে গালি দিচ্ছে!! কিন্তু গলাটা যে বেশ চেনাচেনা লাগছে!! আরে এ তো জয়ার গলা!! জয়াই তাহলে ঝাঁটা হাতে বারান্দা পরিষ্কার করছিল!!"

জগার কথা আমার একবিন্দুও বিশ্বাস হলো না,

- "কী ভুলভাল বকছিস? সামনাসামনি দাঁড়িয়েও তুই জয়াকে চিনতে পারিস নি?"

- "আরে মাইরি বলছি!! একদম বানিয়ে বলছি না!! আসলে জয়াকে এইভাবে ঝাড়ু হাতে কাজ করতে কোনোদিন দেখি নি। তার উপর তুই একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছিস, লকডাউনের চক্করে গত এক মাসের উপর শহরের সব বিউটি পার্লার বন্ধ যে!!"

জগার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ!! জগাতো দেখছি পুরোই পাগলা দাশুর আধুনিক সংস্করণ!!

অবিশ্বাসের সুরে তাও আমি জানতে চাইলাম,

- "কিন্তু কাকিমা এত ক্ষেপে গেলেন কেন?"

- "আরে আর বলিস না। জয়াকে চিনতে না পারার কারণ যে বিউটি পার্লার বন্ধ থাকা, সেটা ব্যাখ্যা করে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। আরোই ক্ষেপে গেছে ও। ফোন করে আমার মাকে সব লাগিয়ে দিয়েছে। আর এই বিউটি পার্লারের ব্যাপারে যে কোনো নারী মাত্রই ভীষণ সেন্সিটিভ। আমার মাও ব্যতিক্রম নয়। তাই মা মোটেও ভালো চোখে নেয় নি ব্যাপারটা। হেব্বি ঝেড়েছে আমাকে। সব মহিলারা মিলে নাকি সরকারের কাছে দাবি জানাবে যে বিউটি পার্লারকে এসেন্সিয়াল সার্ভিস হিসাবে গণ্য করা হোক।"

জগাতো দেখছি পুরোই জ্ঞানপাপী!!

তবে জগার এইসব কথা শুনে নারীমুক্তি দল না আবার ওর বাড়ির সামনে পোস্টার টাঙিয়ে ধর্ণায় বসে!!

আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি না, জগা কি দেখেশুনে গাড্ডায় পা দেয়? নাকি জগা যেখানেই পা দেয়, সেখানেই গর্ত তৈরি হয়ে যায়।

যাই হোক, ছাড়ুন জগার কথা। পুরো লক-ডাউন ব্যাপারটাই ভীষণ stressful. তাই সকল মহিলাদেরই বলছি, ভালো মতন নিজের যত্ন নিন।

সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, ভালো থাকুন।

© অমিতাভ পাল


আরও নতুন লেখকদের গল্প পড়ুন 



আপনি যদি আপনার লেখা আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে চান , তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ  "সাহিত্য মেলা "তে  Join করুন । 

"সাহিত্য মেলা " - https://www.facebook.com/groups/sahityomela

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

close